প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক (Early Intervention) সেবা প্রদান:
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে থেরাপিউটিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়। এ সকল কেন্দ্রসমূহ হতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে আগষ্ট/২০২৩ পর্যন্ত নিবন্ধিত সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৮,০৯,৩৮০ জন ও মোট প্রদত্ত সেবা সংখ্যা (Service Transaction) ১,০৫,৪৮,৭১৫ টি। .
২ এপ্রিল ২০১০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র শীর্ষক কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দুই ধাপে আরও ৪২২টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস (মোবাইল ভ্যান এর মাধ্যমে):
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের দোড়গোরায় থেরাপিউটিক সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ৪০টি মোবাইল থেরাপি ভ্যান কাজ করছে। এই ভ্যানের মাধ্যমে বিনামূল্যে আগষ্ট/২০২৩ পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধিত সেবা গ্রহিতার সংখ্যা ৮,৯০,৩৮৬জন এবং প্রদত্ত সেবা সংখ্যা (Service Transaction) ১১,৩৪,৭৫৯টি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে মোবাইল থেরাপি ভ্যান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।
বিনামূল্যে সহায়ক উপকরণ বিতরণ:
১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আগষ্ট/২০২৩ পর্যন্ত ৬৮,৮৪২ টি সহায়ক উপকরণ (কৃত্রিম অংগ, হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্রাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্র্যাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিন) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালনা:
প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯ এর আওতায় সর্বমোট ৭৪ টি বিশেষ স্কুলের শিক্ষক/ কর্মচারীর ১০০% বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পরিশোধ করা হচ্ছে। বর্তমানে উক্ত স্কুলসমূহে ১১০৩ শিক্ষক/কর্মচারী এবং ১০৮৮৯ জন ছাত্র/ছাত্রী রয়েছে।
স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম পরিচালনা:
অটিজম রিসোর্স সেন্টার:
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ২০১০ সালে একটি অটিজম রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত সেন্টার থেকে অটিজম বৈশিষ্ট সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিবর্গকে বিনামূল্যে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের থেরাপি সেবা, গ্রুপ থেরাপি, দৈনন্দিন কার্যবিধি প্রশিক্ষণসহ রেফারেল ও অটিজম সমস্যাগ্রস্থ শিশুদের পিতা-মাতাদের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১০ সালে চালু হওয়ার পর থেকে সেপ্টেম্বর/২০২৩ পর্যন্ত বিনামূল্যে ৩১৯৮৮ জন অটিজম সমস্যাগ্রস্থ শিশু ও ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ম্যানুয়াল ও Instrumental থেরাপি সার্ভিস প্রদান করা হয়েছে।
সেবাসমূহঃ
অটিজম ও এনডিডি কর্ণার সেবা:
Early Screening, Detection, Assessment ও Early Intervention নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) কর্নার স্থাপন করা হয়েছে।
অনুদান প্রদান:
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান মেলা (Job Fair) আয়োজন:
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ও ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে ৪০ জন এবং ২০১৮ সালে ৬৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি প্রদান করা হয়। ফাউন্ডেশনের Job Placement শাখা হতে তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণঃ
কর্মজীবী প্রতিবন্ধী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল:
চাকুরী প্রত্যাশি ও কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ২০ আসন বিশিষ্ট ১টি পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল চালু করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৩০ হতে ৪০ এ উন্নীত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০০ জন।
পিতৃ-মাতৃহীন প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস:
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ফাউন্ডেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এতিম ও ঠিকানাবিহীন প্রতিবন্ধী শিশুর লালন পালন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস চলমান আছে। বর্তমানে এখানে ৪২ জন শিশুকে লালন পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন:
বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস উদযাপন:
বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালন:
বিপনন ও প্রদর্শণী কেন্দ্র স্থাপন:
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা উৎপাদিত পন্যসামগ্রী প্রদর্শন, বিপনন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে সুবর্ণ ভবনের নীচতলায় একটি বিপনন ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অতিশীঘ্রই বিপনন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রটি চালু করা হবে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ:
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁদের পারদর্শিতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশেষ চাহদা সম্পন্ন ক্রীড়াবিদদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের নিমিত্ত সাভার উপজেলাধীন বারইগ্রাম ও দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২.০১ একর জমিতে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য গণপূত© অধিদপ্তর কর্তৃক ৮৮৭ কোটি ৫৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকার প্রাক্কলন সম্পন্ন একটি ডিপিপি গত ১৬-০৩-২০২১ তারিখ একনেকে অনুমোদিত হয়। গত ২৬/৮/২০২১ তারিখ একনেক কর্তৃক ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন জারী করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বিতরণ:
কোভিড-১৯ জনিত কারণে ‘‘লক ডাউন’’ পরিস্থিতিতে দুঃস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তার নিমিত্ত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সর্বমোট ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে। দেশের ৬৩টি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিতরণকৃত ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে সর্বমোট ১৭,৭৫৫ জন দুঃস্থ প্রতিবন্ধী উপকৃত হয়েছেন। উপকারভোগীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিবন্ধী মহিলা। ঢাকা জেলায় বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ১২ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়ক উপকরণ, আর্থিক অনুদান ও থেরাপি সেবা প্রদান
সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন হতে অত্র গ্রামের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুযায়ী সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হয়। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পরিবার প্রতি ২০,০০০/- টাকা করে ৫০ টি পরিবারকে সর্বমোট ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা অনুদান বিতরণ করেন। আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থেরাপি সেবা প্রদানের নিমিত্ত উক্ত গ্রামের জনৈক হাজী চমক আলীর বাড়ীতে একটি থেরাপি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এছাড়া আমতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়ালেখার উদ্দেশ্যে একটি ‘স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম’ স্থাপন করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত জেলায় আর্থিক সহায়তা প্রদানঃ
দেশের বন্যাকবলিত ৮টি জেলায় ৩,০০০০০/- টাকা হিসেবে সর্বমোট ২৪,০০০০০/- (চবিশ লক্ষ্য) টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।