জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর অনুদান প্রদান নীতিমালা
1. ভূমিকাঃ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর গঠনতন্ত্র ও সংঘস্মারকের আলোকে এর সঞ্চিত আমানতের মুনাফা হতে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অনুসৃত হবে। প্রতিবন্ধী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ফাউন্ডেশনের সহায়তায় যথার্থ প্রয়োগ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা এ নীতিমালার মূল বিবেচ্য হিসেবে গণ্য হবে। |
২. নীতিমালা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষঃ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর গঠনতন্ত্র ও সংঘস্মারকের আলোকে ফাউন্ডেশনের পরিচালকমন্ডলী এ নীতিমালা প্রয়োগ, অনুসরণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। |
3. ক. প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক কার্যক্রমে নিয়োজিত উন্নয়ন সংগঠনসমূহকে নির্দিষ্ট কার্যক্রম/কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তার উদ্দেশ্যে ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তাকে অনুদান হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
খ. কার্যক্রম/কর্মসূচীর ধরণের ভিত্তিতে আর্থিক অনুদান বা সামগ্রী সহায়তা বা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতা (যেসব ক্ষেত্রে গ. সংশ্লিষ্ট সংস্থা/সংগঠনের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক নির্দিষ্ট প্রকল্প, কর্মসূচী বা কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনুদান প্রদান করা হবে। অনুদানের অর্থের |
৪. অনুদান গ্রহণের জন্য যোগ্য সংগঠনঃ নিম্নোক্ত যোগ্যতার অধিকারী বাংলাদেশে কর্মরত জাতীয় বা স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা/সংগঠন ফাউন্ডেশনের অনুদান গ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেঃ ক. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত খ. প্রত্যাশি সংস্থা/সংগঠনের অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এবং প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে সংস্থা গ. প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষিত জনবল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সুযোগ থাকতে হবে। ঘ. প্রত্যাশি সংস্থা/সংগঠনের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ইতোপূর্বের কার্যক্রম সম্পর্কে উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়/উপ-জেলা ঙ. প্রত্যাশি সংস্থা/সংগঠন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন হতে ইতোপূর্বে অনুদান পেয়ে থাকলে এ অনুদানের অর্থ দ্বারা প্রতিবন্ধী |
৫. অনুদান গ্রহণে বিবেচ্য কর্মসূচীঃ শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত সংস্থা/সংগঠন ফাউন্ডেশনের অনুদান গ্রহণের আওতায় বিবেচিত হবে। প্রতিবন্ধী বলতে প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা ও জাতীয় প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন, ২০০১ এ বর্ণিত প্রতিবন্ধী মানুষকে বুঝাবেঃ (ক). স্থানীয় বা জাতীয় সংগঠন যারা প্রত্যক্ষভাবে সমাজে প্রতিবন্ধী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমাজভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। (খ). প্রতিবন্ধী জনগণের উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ বিশেষ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। (গ). প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়নে প্রতিবন্ধী জনগণ পরিচালিত সংগঠন Self-help organization । (ঘ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে। (ঙ). প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সামগ্রিক সমন্বয়, আন্তসাংগঠনিক যোগাযোগ, এডভোকেসি সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। |
৬. অনুদানের আওতায় সাধারণ ভাবে নিম্নোক্ত কার্যক্রমসমূহের প্রাধান্য থাকবেঃ (ক) প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম। (খ) প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম। (গ) প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য প্রত্যক্ষ প্রাথমিক পুনর্বাসন সেবা। (ঘ) সহায়ক উপকরণ তৈরী ও সেবা প্রদান। (ঙ) প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা কার্যক্রম। (চ) প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ও স্থানীয় ভিত্তিক আন্তসাংগঠনিক কার্যক্রমের সমন্বয় কার্যক্রম। (ছ) প্রতিবন্ধী জনগণকে বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্তকরণ। (জ) প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা। (ঝ) প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ। (ঞ) প্রতিবন্ধিতা রোধ ও নিরসনে চিকিৎসা। (ট) কেন্দ্রভিত্তিক পুনর্বাসন। (ঠ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান। (ড) প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ। (ঢ) প্রশিক্ষণ ও গণসচেতনতা উপকরণ তৈরী ও উন্নয়ন। (ণ) প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়ন কার্যক্রমে পরামর্শ ও কৌশলগত সহায়তা। (ত) প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা। (থ) বিশেষ সেবা প্রদান। (দ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সংগ্রহ ও সরকারী/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিয়োগদানের বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণ। (ধ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী আইটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিকে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্য করার জন্য উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ। এছাড়া ফাউন্ডেশনের পরিচালকমন্ডলীর বিশেষ বিবেচনায় প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে অন্য যে কোন কার্যক্রম অনুদানের আওতায় বিবেচিত হবে। অনুদানের পরিমাণঃ সংগঠনের কার্যক্রম প্রস্তাবনার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ বিবেচনা করা হবে। অনুদানের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০/- এবং সর্বনিম্ন ১০,০০০/- টাকা। ফাউন্ডেশনের আর্থিক যোগান সাপেক্ষে পরবর্তী বছরের অনুদানের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। অনুদান এককালীন বা দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিবেচনা করা যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট স্বল্প সময়ে কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য এককালীন অনুদান প্রদান করা হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদের ক্ষেত্রে বাৎসরিক কিস্তি প্রদানের ভিত্তিতে ২ বৎসর হতে ৫ বছর মেয়াদী অনুদান প্রদান করা যেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব বিনিয়োগ প্রাক্কলিত ব্যয়ের কমপক্ষে ২০% হতে হবে। |
৮. অনুদানের আবেদন প্রক্রিয়াঃ |
অনুদান গ্রহণে ইচ্ছুক সংস্থা/সংগঠনকে ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত তথ্যাবলী সংযুক্ত করতে হবেঃ (ক) প্রতিবন্ধী বিষয়ক কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে একটি সংস্থা বা সংগঠনের এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সুপারিশ। (খ) রেজিষ্ট্রেশন এর সত্যায়িত কপি। (গ) বিগত ১ (এক) বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন। (ঘ) বিগত ১ (এক) বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কপি। |
৯. অনুদান বিবেচনা প্রক্রিয়াঃ (ক). প্রাথমিক বাছাইকৃত তালিকার আলোকে ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি আবেদনকারীর কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ফাউন্ডেশন একটি মতামত প্রণয়ন করবে। (খ). চূড়ান্ত বাছাই তালিাকভুক্ত আবেদনপত্রসমূহ ফাউন্ডেশনের পরিচালকমন্ডলীর সভায় প্রকল্পের ধরণ, আর্থিক অনুদান, সময়কাল ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে। (গ). চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ফাউন্ডেশন অনুদানের অর্থ ছাড় করবে। (ঘ). কর্মসূচী/প্রকল্পের ক্ষেত্রে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর অর্থ ছাড় করা হবে। (ঙ). বেসরকারী সংস্থার অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ দুই কিস্তিতে ছাড় করা হবে। ১ম কিস্তির অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হলে ২য় কিস্তির অর্থ |
১০. জেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা/জনসংখ্যার ভিত্তিতে অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজন অনুসারে পরিচালকমন্ডলীর সভায় অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। |
১১. অনুদানে গৃহীত প্রকল্প অনুসরণ ও তদারকি প্রক্রিয়াঃ অনুদান প্রাপ্ত প্রকল্প/কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে ফাউন্ডেশন প্রতিবছর কমপক্ষে একবার প্রকল্প/কার্যক্রমটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর বিস্তারিত প্রতিবেদন সংরক্ষণ করবেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থা/সংগঠন প্রতি বছরান্তে সরকার অনুমোদিত যে কোন অডিট ফার্ম দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিরীক্ষা সম্পাদন নিশ্চিত করবেন। পরিদর্শন মন্তব্য ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে অনুদানের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। |